গাজীপুরের শ্রীপুরে দুই স্বর্ণের দোকানে ডাকাতি, মালিক গুলিবিদ্ধ

গাজীপুর প্রতিনিধি : গাজীপুরের শ্রীপুরে ব্যস্ততম ব্যবসাকেন্দ্র জৈনাবাজার এলাকায় মুহুর্মুহু ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দুটি স্বর্ণের দোকান লুট করেছে সশস্ত্র দুর্বৃত্ত দল। শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে লুটতরাজের ওই ঘটনাটি ঘটে। ওই সময় মুহুর্মুহু ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে দুর্বৃত্ত দল।

লুট হওয়া একটি দোকানের মালিক দেবেন্দ্র কর্মকার দেবু (৪৫) গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা গুরুতর অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেছে। দুর্বৃত্তদের ছোড়া গুলিটি তাঁর পেটের বাঁ পাশ ছিঁড়ে বেরিয়ে গেছে। তবে তিনি আশঙ্কামুক্ত বলে জানা গেছে।

স্বর্ণের দোকানের কর্মচারীরা জানায়, দুই দোকান থেকে নগদ টাকাসহ প্রায় দেড় কোটি টাকার স্বর্ণালঙ্কার লুট হয়েছে। দুঃসাহসিক এ ঘটনায় পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

ব্যবসায়ীরা জানায়, সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে শৈলাট রোড মোড় এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে আচমকা চার থেকে পাঁচটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। এতে পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আতঙ্কে আশপাশের ব্যবসায়ীরা দোকানপাট বন্ধ করে ফেলে। ওই সুযোগে ১০ থেকে ১২ জন দুর্বৃত্ত রিভলবার ও চাপাতি উঁচিয়ে পাশের গফুর মাস্টার সুপার মার্কেটের নিউ দীপা জুয়েলার্স ও লক্ষ্মী জুয়েলার্সের ভেতর ঢোকে। কেউ কিছু বুঝে উঠার আগেই সেখানে তারা ব্যাপক ভাঙচুর শুরু করে। ওই সময় দোকানে থাকা ক্রেতারা নিরাপদে সরে যায়।

লক্ষ্মী জুয়েলার্সের সত্ত্বাধিকারী মানিকচন্দ্র পাল জানান, এরপর দুর্বৃত্তদলের সদস্যরা দুটি দোকানের কর্মচারীদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নগদ টাকাসহ স্বর্ণালঙ্কার লুট করে। ওই সময় বাধা দেওয়ায় নিউ দীপা জুয়েলার্সের সত্ত্বাধিকারী দেবেন্দ্র কর্মকার দেবুকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে দুর্বৃত্তরা। গুলি তাঁর পেটের বাঁ পাশে বিদ্ধ হয়ে বেরিয়ে যায়। দুর্বৃত্তরা চলে যাওয়ার পর ব্যবসায়ীরা গুরুতর অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে।

গুলিবিদ্ধ ব্যবসায়ীর সঙ্গে থাকা পাশের আঁখি জুয়েলার্সের সত্ত্বাধিকারী আনোয়ার হোসেন জানান, রাত সাড়ে ১০টার দিকে চিকিৎসকরা তাঁকে জানিয়েছেন, দেবেন্দ্র কর্মকার দেবু আশঙ্কামুক্ত। রাত পৌনে ১১টার দিকে দেবেন্দ্র তাঁর সঙ্গে কথাও বলেছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী মুদি দোকানি আমান উল্লাহ জানান, ফেরার পথে ফের চার থেকে পাঁচ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে দুর্বৃত্তরা।

মানিক চন্দ্র পাল জানান, সাদা রঙের একটি নোয়া মাইক্রোবাসযোগে আসা ১০ থেকে ১২ জন দুর্বৃত্তদলের সদস্য লুটতরাজের পর ময়মনসিংহের দিকে পালিয়ে যায়। দুর্বৃত্তদলে থাকা বেশির ভাগই ছিলেন মাঝ বয়সী। দুজন ছিলেন অল্প বয়সী যুবক। মুখোশ ছিল না তাদের কারো মুখেই।

ওই বাজারের ব্যবসায়ী শওকত হোসেন জানান, সেখানে ওই মার্কেটে পাশাপাশি ১১টি স্বর্ণের দোকান। এর মধ্যে বড় দোকানই হচ্ছে নিউ দীপা জুয়েলার্স। দোকানটিতে সিসি ক্যামেরাও রয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ব্যবসায়ী আজাহার হোসেন জানান, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে একটি ফলের দোকানের সামনে মাইক্রোবাস রেখে অস্ত্র উঁচিয়ে স্বর্ণের দোকানে ঢুকে তারা (দুর্বৃত্ত)। ওই সময় মাইক্রোবাসে চালকসহ অস্ত্রধারী একজনকে অস্ত্র তাক করে বসে থাকা দেখেছেন তিনি। মাত্র চার থেকে পাঁচ মিনিটের ব্যবধানে লুটতরাজ ঘটিয়ে পালিয়ে যায় তারা।

ওই সময় পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

লক্ষ্মী জুয়েলার্সের সত্ত্বাধিকারী মানিকচন্দ্র পাল দাবি করেন, দুটি দোকান থেকে নগদ টাকাসহ প্রায় দেড় কোটি টাকার স্বর্ণালঙ্কার লুট হয়েছে। ঘটনার পর রাত সাড়ে ৮টার দিকে গাজীপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) শামসুন্নাহার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

শ্রীপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লিয়াকত আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, ঘটনার পর পরই পুলিশ ঘটনাস্থল পৌঁছে তদন্ত শুরু করেছে। তাৎক্ষণিক আশপাশের সব কটি সীমানা এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়েছে পুলিশ। লুট হওয়া একটি দোকানের সিসি ক্যামেরা ফুটেজ দেখে দুর্বৃত্ত দলকে শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *