রিপন কান্তি গুণ, বারহাট্টা (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি:
নবমী তিথি আসা মানেই যেন, ‘দুর্গা মায়ের বিদায়য়ের ঘণ্টা বেজে যাওয়া।’ আগামীকাল বিজয় দশমী তারপর আবার এক বছরের অপেক্ষা। এক বছর পরে আমার মহামায়া আসবেন পিত্রালয়ে।
ভক্তি, শ্রদ্ধা, আরতি, অঞ্জলি প্রদান ও প্রসাদ বিতরণের মধ্য দিয়ে গত ১অক্টোবর ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হয় শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রথম পূজা। পূজার চতুর্থ দিন আজ (৪অক্টোবর) মঙ্গলবার মহানবমী পূজা।
নবমী তিথির পূজা শেষ হওয়ার পর থেকেই দুর্গা পুজোর শেষ দিন হিসাবে ধরা হয়। নবমী পূজার পরের দিন অর্থাৎ দশমী তিথিতে মর্ত্যলোকের সকল ভক্তদের কাঁদিয়ে কৈলাসের উদ্দেশে রওনা হবেন দেবী।
নবমী তিথিটি তাই নানান কারণে গুরুত্বপূর্ণ। এই তিথিতে দুর্গার এক স্বরূপ সিদ্ধিদাত্রীর পুজো হয়। শাস্ত্র মতে, সিদ্ধিদাত্রীর কাছে অণিমা, মহিমা, প্রাপ্তি, প্রকাম্য, গরিমা, লঘিমা, ঈশিত্ব ও বশিত্ব নামক আটটি সিদ্ধি রয়েছে। আজ, অর্থাৎ ৪ঠা অক্টোবর নবরাত্রির মহানবমী তিথি।
হিন্দু শাস্ত্রমতে মহানবমী বা দুর্গা নবমী হল আসুরিক শক্তি বধ করে বিজয়ের দিন।
শ্রী শ্রী চণ্ডী গ্রন্থ থেকে জানা যায়, দেবী দুর্গা রুদ্ররূপ (মহাকালী রূপ) ধারণ করে মহিষাসুর এবং তাঁর তিন যোদ্ধা চণ্ড, মুণ্ড এবং রক্তবিজকে হত্যা করেন। মহানবমী তিথি শুরুই হয় সন্ধিপূজা দিয়ে।
একশত আটটি মাটির প্রদীপ জ্বালিয়ে ও একশত আটটি পদ্মফুল মহানবমী তিথিতে নিবেদন করা হয় দেবীর চরণে। আর ঠিক এই কারণে পূজার মন্ত্রেও সেই বিশেষত্ব উল্লেখ করা হয়েছে ।
মহানবমী তিথির বিশেষত্ব হল হোম-যজ্ঞ অনুষ্ঠান। নবমী তিথিতেই মূলত হোম হয়ে থাকে, ব্যতিক্রমী নিয়মও থাকতে পারে। মূলত, হোম-যজ্ঞনুষ্ঠানে আটাশটা বা একশো আটটা নিখুঁত বেলপাতা লাগে। বালি দিয়ে যজ্ঞের মঞ্চ বানিয়ে বেলকাঠ ঠিকভাবে নিয়ম মতো সাজিয়ে, পাটকাঠি দিয়ে আগুন ধরিয়ে ঘি’তে চুবিয়ে বেলপাতাগুলো নিবেদন করা হয়। তারপর সবার শেষে একটি কলা চেলীতে বেঁধে পান নিয়ে সেটা ঘি’তে চুবিয়ে পূর্ণাহুতি দেওয়া হয়। তারপর তার মধ্যে দই ও দুধ দিয়ে আগুন নেভানো হয়।
বারহাট্টা উপজেলায় ৫১টি পূজা মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে, গতকাল বৃষ্টি উপেক্ষা করেই, মণ্ডপে মণ্ডপে ছিল উপচে পড়া ভিড়।
বারহাট্টা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি দীপক কুমার সাহা বলেন, আমি বারহাট্টা উপজেলার প্রতিটি পূজা মণ্ডপ পরিদর্শন করেছি। বারহাট্টার প্রতিটি পূজা সুশৃঙ্খল ভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সাম্প্রদায়িকতার মনোভাবকে বিসর্জন দিয়ে সকল ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে হিন্দু–মুসলিম সবাই মিলে শারদীয় দুর্গোৎসব পালন করছি এবং ভবিষ্যতেও করবো।
বারহাট্টা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)মুহাম্মদ লুৎফর রহমান বারহাট্টার ৫১টি পূজা মণ্ডপ পরিদর্শন করে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, বারহাট্টার প্রতিটি পূজাই সুশৃঙ্খল ভাবে সম্পন্ন হচ্ছে। আমি পূজা চলাকালীন সময়ে প্রতিটি মণ্ডপ পরিদর্শন করেছি। বিজয় দশমীতে মুর্তি বিসর্জন পর্যন্ত আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেকোনো রকম ঝামেলা প্রতিহত করতে সদা প্রস্তুত আছে।