কুষ্টিয়ায় চলছে তীব্র তাপপ্রবাহ, হাতপাখার বেড়েছে কদর

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি :

 

কুষ্টিয়ায় চলছে তীব্র তাপপ্রবাহ। টানা প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে চলা প্রচণ্ড গরমে বিপর্যস্ত জনজীবন। তীব্র গরমে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে লোডশেডিং। ঘণ্টার পর ঘণ্টাজুড়ে চলছে লোডশেডিং। এতে জেলায় কদর বেড়েছে হাতপাখার। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ঘুমও হারাম হয়ে গেছে পাখা তৈরির কারিগরদের। কারিগররা এখন দিনরাত সমান তালে পাখা তৈরির কাজে ব্যস্ত।

 

লোডশেডিং আর প্রচণ্ড গরমের কারণে শহর-গ্রাম সর্বত্রই হাতপাখার কদর বেড়েছে। তবে শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলের লোডশেডিং বেশি হওয়ায় গ্রাম-গঞ্জে হাতপাখার কদর সবচেয়ে বেশি।

 

কুষ্টিয়া শহরের রাজারহাট মোড় এলাকায় কয়েকটি পাখা বিক্রির পাইকারি দোকান রয়েছে। রাজারহাট মোড় এলাকার পাইকারি পাখা বিক্রির দোকানদার নারায়ণ রায় জানান, গরম শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হাতপাখার কদর শুরু হয়। তবে তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে গত দুই সপ্তাহ ধরে কুষ্টিয়ায় ব্যাপক হারে হাতে তৈরি তালপাখার কদর বেড়েছে। গরমের শুরুতে প্রতিদিন ৫০ থেকে ৭০ পিস পাখা বিক্রি হতো। আর এখন গরমের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় হাতপাখার চাহিদা প্রায় দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে গেছে। এখন প্রতিদিন একেকটি দোকানে কমপক্ষে ২০০ থেকে ৩০০ পিস পাখা বিক্রি হচ্ছে।

 

এদিকে চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাইকারিতে পাখার দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। আগে যেখানে বাঁশের হাতল দিয়ে তৈরি প্রতি ১০০ পিস হাতপাখার দাম পড়তো ৯ থেকে ১০ টাকা। এখন সেই হাতপাখা পাইকারি প্রতি পিস ১৫ থেকে ১৬ টাকায় কিনতে হচ্ছে।

 

কুষ্টিয়ায় বর্তমানে বাঁশের হাতল বা বাঁশের ডান্টির তৈরি হাতপাখা বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা আর তালের হাতল বা তালের ডান্টির তৈরি হাতপাখা বিক্রি হচ্ছে প্রতি পিস ৪০ থেকে ৫০ টাকায়।

 

রাজারহাট মোড় এলাকার হাতপাখার আরেক পাইকারি দোকানদার প্রকাশ জানান, এ বছর গরমের শুরুতেও হাতপাখার চাহিদা এত ছিল না। হঠাৎ করে গরম বেশি পড়ার কারণে এবং লোডশেডিংয়ের কারণে পাখার চাহিদা দিগুণেরও বেশি বেড়ে গেছে।

 

কথা হয় কুমারখালীর নন্দলালপুর থেকে পাইকারি দামে হাতপাখা কিনতে আসা ব্যবসায়ী জাকির আলীর সঙ্গে। তিনি জানান, একেতো প্রচণ্ড গরম, সেইসঙ্গে ঘন ঘন লোডশেডিং। শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিংয়ের মাত্রা বেশি থাকায় গ্রাম-গঞ্জে এখন পাখার কদর তুঙ্গে।

 

শহরতলীর জুগিয়া কদমতলা এলাকা থেকে পাখা কিনতে আসা রবিউল ইসলাম জানান, গ্রামে রাতদিন মিলিয়ে এখন সর্বোচ্চ তিন থেকে চার ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে। যে কারণে গরম নিবারণ করতে হাতপাখা ছাড়া আর তাদের অন্য কোনো বিকল্প নেই।

 

কুষ্টিয়া জেলায় গত এক সপ্তাহ ধরে তাপমাত্রা ৩৯ থেকে ৪০ এমনকি ৪১ ডিগ্রিতে উঠে যাচ্ছে। গরমের সঙ্গে জেলায় পাল্লা দিয়ে বেড়েছে লোডশেডিং।

 

কুষ্টিয়া ওজোপাডিকোর নির্বাহী প্রকৌশলী অনুপম চক্রবর্তী জানান, বর্তমানে কুষ্টিয়া জেলায় ওজোপাডিকোর আওতাধীন এলাকার জন্য প্রতিদিন বিদ্যুতের চাহিদা ৫৮ থেকে ৬০ মেগাওয়াট। কিন্তু তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে গত দুদিন ধরে বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে ৪২ থেকে ৪৬ মেগাওয়াট। আবার কোনো কোনো সময় ৪০ মেগাওয়াট পাওয়া যায়। চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ সরবরাহ অপ্রতুল হওয়ায় বাই রোটেশনে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং করে ঘাটতি মোকাবিলা করা হচ্ছে। বর্তমানে ওজোপাডিকোর আওতায় প্রায় ৬৮ হাজার বিদ্যুতের গ্রাহক রয়েছেন বলেও জানান এ কর্মকর্তা।

 

কুষ্টিয়া পল্লী বিদ্যুতের (কুমারখালী- খোকসা) এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত ডিজিএম আনসার আলী জানান, বর্তমানে কুষ্টিয়ায় পল্লী বিদ্যুতের চাহিদা সকালে ১০৮ মেগাওয়াট এবং সন্ধ্যা সাতটায় ১৩৭ মেগাওয়াট। সন্ধ্যার সময় পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৯৬ মেগাওয়াট। প্রতিনিয়তই ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে। যে কারণে ঘণ্টায় ঘণ্টায় এলাকাভিত্তিক বাই রোটেশন করে বিদ্যুতের লোডশেডিং করতে হচ্ছে।

 

তিনি জানান, কুমারখালী উপজেলাতেই পল্লী বিদ্যুতের চাহিদা ১৮ থেকে ১৯ মেগাওয়াট। সেখানে পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৭ থেকে ৮ মেগাওয়াট।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *