ইউএসবি-সি যুগে আইফোন

অনলাইন ডেস্ক :

 

প্রতিবছর সেপ্টেম্বরের প্রথম ভাগে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে নতুন ওয়াচ আর আইফোন উন্মোচন করে থাকে অ্যাপল। নিজস্ব ক্যাম্পাস, স্টিভ জবস থিয়েটারে স্টেজ শো এবং অনলাইনে স্ট্রিম করে ঘোষণা দিয়ে এবার তারা বাজারে এনেছে অ্যাপল ওয়াচ সিরিজ ৯, ওয়াচ আলট্রা ২, আইফোন ১৫ ও ১৫ প্লাস এবং আইফোন ১৫ প্রো এবং প্রো ম্যাক্স।

 

আইফোন ১৫

আইফোন ১৪ আর ১৫ পেছন থেকে পাশাপাশি দেখলে ধরা কঠিন কোনটা নতুন ফোন। আইফোন ১২ থেকে শুরু হওয়া গ্লাসের ক্যামেরা বাম্পের মধ্যে কোনাকুনি বসানো দুটি ক্যামেরা এবারও একইভাবে বসানো হয়েছে। তবে ক্যামেরা বাম্পটি আগের চেয়ে আরো মসৃণভাবে পেছনের গ্লাসের সঙ্গে মিশে গেছে। ফোনের অ্যালুমিনিয়াম ফ্রেমের কিনারাগুলো আগের মডেলগুলোর মতো তীক্ষ না রেখে কিছুটা বৃত্তাকার বা রাউন্ডেড করা হয়েছে, যাতে হাতে আরো আরামদায়কভাবে ধরা যায়।

অবশেষে আইফোন থেকে বাদ পড়েছে বিশাল আকৃতির নচ, অ্যাপল ১৪ প্রো সিরিজের পাঞ্চ হোল ‘ডাইনামিক আইল্যান্ড’ এবার আইফোন ১৫-তে যুক্ত করেছে। আইফোন ১৫-তে থাকছে ৬.১ ইঞ্চি ডিসপ্লে, আইফোন ১৫ প্লাস পাচ্ছে ৬.৭ ইঞ্চি ডিসপ্লে। দুটি ফোনের ডিসপ্লেই রেটিনা রেজল্যুশনের ডলবি এইচডিআর সমর্থিত এক হাজার নিট ব্রাইটনেসের ওলেড এক্সডিআর প্রযুক্তিতে তৈরি। ফোনগুলোতে থাকছে এ১৬ বায়োনিক প্রসেসর, যা আগের ১৪ প্রো সিরিজে প্রথম ব্যবহৃত হয়।
ক্যামেরাও যথারীতি ৪৮ মেগাপিক্সেল মূল সেন্সর এবং ১২ মেগাপিক্সেল আলট্রা ওয়াইড ও সেলফি। বলা যায় আইফোন ১৪ প্রো থেকে টেলিফটো লেন্স বাদ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে আইফোন ১৫ সিরিজ। তবে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন, লাইটেনিং পোর্ট বাদ দিয়ে অ্যাপল এতে যুক্ত করেছে ইউএসবি-সি চার্জিং ও ডাটা ট্রান্সফার পোর্ট। তবে পোর্টটির গতি ইউএসবি ২, অর্থাৎ ৪৮০ মেগাবিটেই রয়ে গেছে।
বড় ফাইল আদান-প্রদান এখনো ৪০-৪৫ মেগাবাইটের ওপরে উঠবে না। আলট্রাওয়াইডব্যান্ড ২ প্রযুক্তির পাশাপাশি নেটওয়ার্কের বাইরে থাকলে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে জরুরি সেবাদানকারী সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার ব্যবস্থাও দেওয়া হয়েছে। ব্যাটারির সাইজ বা চার্জিং ওয়াটেজ নিয়ে কিছু জানায়নি অ্যাপল, তবে ৩০ মিনিটে ০-৫০ শতাংশ চার্জ হবে এবং এক চার্জে এক দিন চলবে দাবি করা হয়েছে। সর্বমোট পাঁচটি রঙে পাওয়া যাবে ফোনগুলো। দাম ধরা হয়েছে আইফোন ১৫ মডেলের জন্য ৭৯৯ ডলার থেকে শুরু আর আইফোন ১৫ প্লাস মডেলের জন্য ৮৯৯ ডলার থেকে শুরু।
 

desherpotrika.com

আইফোন ১৫ প্রো

কয়েক বছর ধরে আইফোন প্রো সিরিজের স্টেইনলেস স্টিল ফ্রেমের ওজন নিয়ে ব্যবহারকারীরা ছিল নাখোশ। এবার আইফোন ১৫ প্রো এবং প্রো ম্যাক্স তৈরি করা হয়েছে টাইটেনিয়ামের অ্যালোয় টাইটেনিয়াম ৫ ব্যবহার করে। অ্যাপলের দাবি, এতে করে আইফোন প্রো সিরিজের অতিরিক্ত ওজন কমে গেলেও বডি থাকবে আগের মতোই শক্তপোক্ত। আইফোন ১৫-এর মতো ১৫ প্রো সিরিজের মডেলগুলোতেও রাউন্ডেড এজ ব্যবহার করা হয়েছে। তবে বাদ গেছে এলার্ট স্লাইডার। তার বদলে অ্যাপল এতে যুক্ত করেছে অ্যাকশন বাটন, যা সাইলেন্ট মোড চালু-বন্ধের পাশাপাশি আরো কাজের জন্য প্রগ্রামও করে নেওয়া যাবে। চার্জিংয়ের জন্য ইউএসবি-সি পোর্ট দেওয়া হয়েছে, যা ইউএসবি ৩ গতি সমর্থন করে। অ্যাপল এবার বাস্তবসম্মত ছবির ওপর গুরুত্ব বাড়িয়েছে। ‘র’ ফরম্যাটে ছবি তোলার পাশাপাশি প্রতিটি ছবিতে পুরো ফোকাসের ডাটা দেওয়া থাকবে, যাতে এডিট করার সময় বিষয়বস্তুর ফোকাস বদলানো যায়। ভিডিওতে তারা প্রো-রেস এবং এভ১ এনকোডিংয়ের ব্যবস্থা রেখেছে, যাতে আইফোন ১৫ প্রো সিরিজে ভিডিও করলে সেটি পেশাদারি সিনে-ক্যামেরার ফুটেজের মতো মান ধরে রেখে এডিট করা যায়। এ ধরনের ফুটেজ অনেক জায়গা নিয়ে থাকে, তাই সরাসরি আইফোন ১৫ প্রো সিরিজে ইউএসবি-সি পোর্টের মাধ্যমে এসএসডি লাগিয়ে সেটাতে ভিডিও ধারণ করা যাবে। এ ছাড়া ছবি ও ভিডিওতে অটোমেটিক লাইটিং, কালার ও অন্যান্য জিনিস ব্যালান্সের পাশাপাশি পোর্টেট ব্লার করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, তাই পোর্ট্রেট মোডে ছবি না তুলেও পরে সেটা পোট্রেট করা যাবে। বাকি দুটি সেন্সরে নতুনত্ব না এলেও নাইটমোডের অ্যালগরিদম আরো নিখুঁত করা হয়েছে, আর ১৫ প্রো ম্যাক্স মডেলে টেলিফটো ৩এক্স থেকে ৫এক্স জুমে উন্নীত করা হয়েছে। টেলিফটো সেন্সরে থাকছে ৩ অ্যাক্সিস স্ট্যাবিলাইজেশন, যাতে ফুল জুম করে ভিডিও করলেও ফুটেজ না কাঁপে। আর এসব চমৎকার ফিচার চালানোর জন্য আছে নতুন অ্যাপল এ১৭ প্রো এসওসি। শক্তিশালী সিপিউ কোরের পাশাপাশি অ্যাপল এবার তাদের জিপিউ কোরে যুক্ত করেছে নতুন ফিচার, রে-ট্রেসিং। এতে করে পিএস৫ মানের গেম সরাসরি আইফোনে চালানো যাবে। রেসিডেন্ট ইভিল ৪ রিমেক, রেসিডেন্ট ইভিল ভিলেজ এবং এখনো অপ্রকাশিত অ্যাসাসিন্স ক্রিড মিরাজ গেমগুলো শিগগিরই আইফোনে খেলা যাবে, জানিয়েছে অ্যাপল। মোবাইল গেমিংয়ের ওপর অ্যাপলের গুরুত্ব সামনের দিনগুলোতে আরো বাড়াবে, এমনটাই বলেছে তারা। আইফোন ১৫ প্রো এবং প্রো ম্যাক্স মডেল চারটি রঙে পাওয়া যাবে। তবে টাইটেনিয়াম রং করা অ্যালুমিনিয়াম বা স্টেইনলেস স্টিলের চেয়ে কঠিন হওয়ায় প্রতিটি রঙেই টাইটেনিয়ামের প্রাকৃতিক রঙের কিছুটা ছোঁয়া থাকবেই। আইফোন ১৫ প্রোর দাম শুরু ৯৯৯ ডলার থেকে এবং প্রো ম্যাক্স মডেলের দাম এক হাজার ১৯৯ ডলার থেকে শুরু।

desherpotrika.com

অ্যাপল ওয়াচ

পুরনো ডিজাইনে নতুন হার্ডওয়্যার যোগ করে মডেল হালনাগাদ করাটা যেন অ্যাপলের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। অ্যাপল ওয়াচ সিরিজ ৮ আর ৯-এর ডিজাইনে তফাত ধরা মুশকিল, আলট্রা এবং আলট্রা ২ দেখেও বোঝার উপায় নেই। নতুন গোলাপি রং এবং অল্পবিস্তর কম বেজেলওয়ালা ডিসপ্লের পাশাপাশি অ্যাপল ওয়াচ সিরিজ ৯-এ থাকছে এস৯ প্রসেসর। একই প্রসেসর আপগ্রেড ‘ওয়াচ আলট্রা ২’ও পাচ্ছে, সঙ্গে থাকছে তিন হাজার নিট পর্যন্ত উজ্জ্বল ডিসপ্লে। চার কোরের নিউরাল ইঞ্জিন থাকায় এস৯ প্রসেসর আইফোন বা ক্লাউডের ওপর নির্ভর না করেই সিরির মাধ্যমে ব্যবহারকারীর কথা শনাক্ত করে কাজ করতে পারে। অ্যাপলের দাবি, এর ফলে ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষার পাশাপাশি আরো দ্রুত কাজ করতে পারবে সিরি। নিউরাল ইঞ্জিনের মাধ্যমে হার্ট রেট ও অক্সিজেন সেন্সরের ডাটা পর্যবেক্ষণ করে অ্যাপল ওয়াচ নতুন একটি জেসচারও শনাক্ত করতে পারবে। হাতের তর্জনি এবং বুড়ো আঙুল দুবার ট্যাপ করলে চালু হবে সিরি। এ ছাড়া আঙুল দুটি একত্র করে হাত নড়াচড়া করে মেন্যু স্ক্রলও করা যাবে। তবে এ জেসচারগুলো পুরনো মডেলগুলোতেও কাজ করানো যাবে অ্যাকসেসিবিলিটি অপশন থেকে, তবে নতুন মডেলগুলোর মতো দ্রুত কাজ না-ও করতে পারে। অ্যাপলের নতুন আলট্রাওয়াইডব্যান্ড ২ প্রযুক্তিও নতুন মডেলে পাওয়া যাবে, যাতে দ্রুত ও নির্ভুলভাবে আইফোন থেকে ওয়াচ বা ওয়াচ থেকে আইফোন বা এয়ারট্যাগের অবস্থান নির্ণয় করা যায়। অ্যাপল ওয়াচ সিরিজ ৯-এর দাম ধরা হয়েছে ৩৯৯ ডলার, তবে জিপিএস এবং সেলুলারসহ মডেল ৪৯৯ ডলার পড়বে। অ্যাপল ওয়াচ আলট্রা ২-এর দাম ৭৯৯ ডলার থেকে শুরু। এবার আর কোনো চামড়ার বেল্ট অপশন থাকছে না। অ্যাপলের দাবি, চামড়াশিল্পের পরিবেশদূষণ কমাতেই তারা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

 

আরো কিছু

আইফোনে লাইটেনিং বাদ দিয়ে ইউএসবি সি পোর্ট ব্যবহার শুরু করায়, যাতে ব্যবহারকারীদের দুটি কেবল বহন করতে না হয়, সে জন্য এয়ারপডসেও ইউএসবি সি পোর্ট ব্যবহার শুরু করেছে অ্যাপল। অফিশিয়াল লাইটেনিং টু ইউএসবি সি কনভার্টারও তৈরি করছে তারা। তারযুক্ত হেডফোন ইয়ারপডসেও দেখা গেছে ইউএসবি সি পোর্ট। এদিকে তারহীন চার্জিংয়ের জন্য আইফোন ১৫ প্রো সিরিজে চি২ প্রযুক্তি ব্যবহার করছে অ্যাপল, যা ম্যাগসেফের আরো আধুনিক সংস্করণ। যেহেতু চি২ অ্যাপলেট পেটেন্ট করা প্রযুক্তি নয়, তাই দ্রুতই অ্যানড্রয়েডেও সেটি পাওয়া যাবে। ফলে তারযুক্ত বা তারহীন—সব চার্জারই আইফোন ও অ্যানড্রয়েড দুই ধরনের ডিভাইসেই ব্যবহার করা যাবে। আইফোন ১৫ এবং ১৫ প্রো, দুটি সিরিজেরই ইউএসবি সি পোর্ট ডিসপ্লেপোর্ট প্রযুক্তি সমর্থন করে। তাই সরাসরি মনিটরের সঙ্গেও সংযুক্ত করা যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *