কুষ্টিয়া সরকারী কলেজ মাঠে তিন দিনব্যাপী ওস্তাদ ভাই লাঠিখেলা ও লোকজ ঐতিহ্য মেলা শুরু

এসকে কুষ্টিয়া :

 

কুষ্টিয়া সরকারী কলেজ মাঠে তিন দিনব্যাপী ওস্তাদ ভাই লাঠিখেলা উৎসব ও লোকজ মেলার উদ্ধোধন করা হয়েছে।

 

গতকাল (বৃহস্পতিবার) বিকেলে লাঠিখেলা ও লোকজ মেলা উদযাপন কমিটির আহবায়ক সাইফুল আলম চৌধুরী রিংকীর সভাপতিত্বে উদ্ধোধনপুর্ব আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে কুষ্টিয়া সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক শিশির কুমার রায় বলেন, আমাদের ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে এ ধরণের আয়োজন খুব প্রয়োজন। নতুন প্রজন্ম আমাদের আবহমান গ্রামবাংলার অনেক ঐতিহ্য, ইতিহাস, কৃষ্টি সম্পর্কে জানে না। বাংলাদেশ লাঠিয়াল বাহিনী আমাদের কলেজ মাঠে তাদের আয়োজনের সুযোগ দিতে পারায় নিজেকে গর্বিত মনে করছি। তিনি বলেন, মাদক, সন্ত্রাস, সামাজিক নানা অসঙ্গতি থেকে আমাদের যুব সমাজকে দুরে রাখতে এমন আয়োজন খুব প্রয়োজন।

 

 

লাঠিখেলা আমাদের গ্রাম বাংলার হাজার বছরের ঐতিহ্য। কিন্তু আধুনিকতার  স্পর্শে তা আজ প্রায় বিলিন হওয়ার পথে। সরকারী নানা উৎসব, আয়োজনে এমনকি জাতীয় ভাবে ক্রীকেট, ফুটবলের মত লাঠিখেলার জন্য একটি পৃথক ইভেন্ট থাকলে এ ঐতিহ্য আবার জেগে উঠবে। তিনি আরও বলেন, সরকারী পৃষ্টপোষকতার পাশাপাশি সমাজের সংস্কৃতিত্ববান মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। তবেই এ ঐতিহ্য আরও প্রসারিত হবে, বিস্তর লাভ করবে। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ লাঠিয়াল বাহিনীর সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন তাজু, কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক মুঈদ রহমান, কুষ্টিয়া চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রির পরিচালক এস এম কাদেরী শাকিল, কুষ্টিয়া সরকারী কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক আনছার উদ্দিন। অনুষ্টানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এ্যাডঃ সুব্রত চক্রবর্তী, আমেরিকান প্রবাসী জিয়া হাসান চৌধুরী রিপন প্রমুখ।

 

জাতীয় সংগীত পরিবেশন এবং জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠানের সুচনা ঘটে। এর পর কুষ্টিয়া মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, টাঙ্গাইলসহ দেশের প্রায় ১২টি জেলা আগত লাঠিয়াল বাহিনীর অংশগ্রহনে তিনদিন ব্যাপী উৎসবের উদ্ধোধন করা হয়। এর আগে সকালে কুষ্টিয়া টাউন হল প্রাঙ্গন থেকে বাংলাদেশ লাঠিয়াল বাহিনীর দলের অংশগ্রহনে একটি সু-সজ্জিত র‌্যালী বের হয়ে শহর প্রদক্ষিণ করে।

 

বাংলাদেশ লাঠিয়াল বাহিনীর সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন তাজু বলেন, বাংলাদেশ লাঠিয়াল বাহিনী দীর্ঘ ৯০ বছর যাবত এই গ্রামবাংলার লোকজ ঐতিহ্য রক্ষায় লাঠিয়াল বাহিনীর সদস্য ও শুভানুধ্যায়ীদের সহযোগিতায় পরিচালনা করে আসছে। সরকারের প্রতি আহবান জানাতে চাই এই লোকজ ঐতিহ্য লাঠিখেলা সংরক্ষণে সংশ্লিষ্ট দপ্তর দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে পারে। ফেব্র“য়ারি মাস ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষার মাস। পাকিস্তানীরা এ দেশের ভাষা ও সংস্কৃতি ধ্বংসে উন্মত্ততায় মেতেছিল যখন, তখন এ দেশের মানুষ জীবন দিয়ে সেই ঐতিহ্য রক্ষায় গড়ে তুলেছিল প্রতিরোধ। ভাষার জন্য আত্মহুতি দিয়েছিল এ দেশের দামাল ছেলেরা। বাংলা ভাষ্য এখন আন্তর্জাতিক ভাষা হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। এই ভাষা ও সংস্কৃতির মাসে আয়োজন করেছি ওস্তাদ ভাই লাঠিখেলা উৎসব ও লোকজ মেলা। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে উপস্থিত থাকছেন লাঠিয়াল দল এবং খেলোয়াড় বৃন্দ। লাঠিখেলা প্রদর্শন করছেন শহরের বিভিন্ন জায়গায়। আশা করি সকলের সহযোগিতায় গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলা হয়ে উঠবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ঐতিহ্যবাহী খেলা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *