কুষ্টিয়া প্রতিনিধি : ঝিনাইদহ এলজিইডির গাড়িচালক এটিএম হাসানুজ্জামান জগলু (৪৫) হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার সন্দেহে পুলিশ তার স্ত্রী তাহমিনা পারভিন তমাকে (৩৭) গ্রেপ্তার করেছে। এছাড়া এ হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত গাড়ি জব্দ ও চালককেও আটক করা হয়েছে। রবিবার পুলিশ ব্যুরো অব ইনেভেস্টিগেশন-পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এমকেএইচ জাহাঙ্গীর হোসেন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। তিনি জানান, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক গাজী মাহবুবুর রহমান ৩১ আগস্ট বেলা আড়াইটার দিকে যশোর থেকে তাহমিনা পারভিন তমাকে গ্রেপ্তার করেন। ২৮ আগস্ট সকালে যশোর সদরের সাতমাইল এলাকায় যশোর-ঝিনাইদহ সড়কের কাজী নজরুল ইসলাম ডিগ্রি কলেজের পাশের ব্রিজের কাছ থেকে হাসানুজ্জামান জগলুর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পিবিআই জানায়, ১৯৯৯ সালে জগলুর সাথে তমার বিয়ে হয়।
তাদের সংসারে এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। ২০০৮ সালে জগলু সাসপেন্ড হওয়ার পর তাদের সংসারে আর্থিক সঙ্কট ও কলহের সৃষ্টি হয়। মেয়েকে কুষ্টিয়ায় রেখে ছেলেকে কলেজে পড়ানোর জন্যে তমা ঢাকায় অবস্থান করতে শুরু করেন। সেখানে আল আমিন ও মুরসালিন নামে দুই যুবকের সঙ্গে তমার বন্ধুত্ব হয়। কেরানীগঞ্জে মুরসালিনকে স্বামী এবং আল আমিনকে দেবর পরিচয় দিয়ে তমা ভাড়া বাসায় থাকতেন। বিষয়টি জানার পর স্বামী জগলুর সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হয়। ২৬ আগস্ট ফোনে তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়। এরপর সেই রাতে মুরসালিন ও আল আমিনকে তিনি জানান, জগলু তার জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে, একটা ব্যবস্থা করা দরকার। ওইসময় তারা জগলুকে হত্যার পরিকল্পনা করে এবং সেই মোতাবেক তারা একটি উবারের গাড়ি নিয়ে যশোরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়।
২৭ আগস্ট বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তারা যশোরে পৌঁছায়। রাতে ফোনে জগলুকে ২০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা বলে তাকে ঝিনাইদহ শহরের শামিমা ক্লিনিকের সামনে আসতে বলে। রাত ১০টার দিকে তারা জগলুকে গাড়িতে তোলে এবং পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী জগলুকে প্রথমে চেতনানাশক দিয়ে অজ্ঞান করা হয়। এরপর তারা শ্বাসরোধ করে হত্যার পর ফাঁকা জায়গায় তার মরদেহ ফেলে রাখে। সেখানে মৃত্যু নিশ্চিত করতে ছুরি দিয়ে জগলুর গলা কেটে দেওয়া হয়। এরপর তারা ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা দেয়। পথিমধ্যে মুন্সিগঞ্জে মুরসালিনের খালাবাড়িতে কাপড় চোপড় পরিবর্তন ও গাড়ি ধুয়ে মুছে ঢাকায় চলে যায়। পিবিআই জানায়, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের বড়ভাই এটিএম হাকিমুজ্জামান বাদি হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামি করে কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা করেন।
পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরও জানান, স্বীকারোক্তি দেওয়ার পর আদালত তমাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এদিকে হাসানুজ্জামান জগলু হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত গাড়িটি ও তার চালককে আটক করেছে পিবিআই সদস্যরা। গ্রেপ্তার হুসাইন খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার নরনিযা গ্রামের মিজানুর রহমান খানের ছেলে। প্রসঙ্গত, গত ২৮ আগস্ট হাসানুজ্জামান জগলুর গলাকাটা মরদেহ যশোর সদরের সাতমাইল এলাকায় কাজী নজরুল ইসলাম কলেজের পাশ থেকে উদ্ধার করা হয়। তিনি ঝিনাইদহ এলজিইডির গাড়িচালক এবং কুষ্টিয়া সদরের জুগিয়া এলাকার মৃত জহুরুল আলমের ছেলে।