দুবলার চরে শেষ হল ৩ দিনের ঐতিহাসিক রাস উৎসব

ডিপি ডেস্ক :

পূর্ণিমার ভরা জোয়ারে সাগরের লোনাজলে পুণ্যস্নানের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে বাগেরহাটের দুবলার চরে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের তিন দিনের ঐতিহাসিক রাস উৎসব। বুধবার (৫ নভেম্বর) ভোরে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে হাজারো নারী-পুরুষ ও শিশু ভক্ত আলোরকোল সমুদ্রসৈকতে নেমে পানিতে পুণ্যস্নান করেন।ভোর সাড়ে ৫টা থেকে শুরু হয়ে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী চলা এই উৎসবে সমুদ্রপারের দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য বিরাজ করেছিল। পুণ্যস্নান শেষে ভক্তরা পূজা-আর্চনা সম্পন্ন করে নিজ নিজ গন্তব্যে রওনা হন।

এ বিষয়ে বন বিভাগ জানায়, এবারের উৎসবে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ১৩ হাজার ৫০০-এরও বেশি পুণ্যার্থী অংশগ্রহণ করেন। তারা বিভিন্ন মানত অনুযায়ী রাধা-কৃষ্ণের মন্দিরে লীলা কীর্তন, পাঁঠা ছাগল বা মুরগি বিলিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে পূজা সম্পন্ন করেছেন।স্থানীয়রা জানায়, কেউ রোগমুক্তি, কেউ আর্থিক সমস্যা সমাধান, কেউ পাপ মোচনের আশায় এই পূজায় অংশ নিয়েছেন। অনেকেই দুই-তিন দশক ধরে নিয়মিত এই রাস পূজায় আসছেন।

উৎসব চলাকালীন বন বিভাগ, কোস্ট গার্ড, নৌবাহিনী ও পুলিশের একাধিক টিম সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। মঙ্গলবার দুপুরে সমুদ্রে গোসল করতে নেমে সুমন নামে এক পুণ্যার্থী নিখোঁজ হয়েছিলেন; পরে কোস্ট গার্ডের উদ্ধারকারী জাহাজ তাকে জীবিত উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।

ইতিহাস অনুসারে, আঠারো শতকের শেষভাগে বা উনিশ শতকের শুরুর দিকে হিন্দু সন্ন্যাসী হরভজন দাস দুবলার চরে রাস পূজার সূচনা করেন। এর পর থেকে এটি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম বড় ধর্মীয় ও পর্যটন উৎসব হিসেবে পরিচিত।তবে ২০১৭ সালের পর বন বিভাগ পরিবেশ সংরক্ষণ ও জীববৈচিত্র রক্ষার কারণে মেলার আকার সীমিত করে শুধু পূজার্থীদের জন্য উৎসব পরিচালনা করা হচ্ছে।

রেজাউল করিম চৌধুরী, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও), বলেন, উৎসবটি শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে। কোস্ট গার্ড, পুলিশ ও বন বিভাগের সার্বিক সহযোগিতায় কোনো ত্রুটি হয়নি। উৎসব শেষে বন ও উপকূলীয় এলাকায় টহল অব্যাহত রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *