‘শারদীয় শুভেচ্ছা, সম্প্রীতির বন্ধন অটুট থাকুক’

শরতের শুভ্র মেঘের ভেলায় চড়ে শারদীয় দুর্গোৎসব আবারো এলো বাংলার ঘরে। আনন্দময়ীর আগমনে আনন্দে গিয়েছে দেশ ছেয়ে। এ অপরূপ বাংলার চিরন্তন দৃশ্য। ছেলেবেলা থেকে গ্রামে-গঞ্জে, নগরে-বন্দরে দেখে এসেছি কত না আনন্দ উৎসবের বিপুল আয়োজন। দেখেছি উচ্ছ্বসিত মানুষের ভক্তিপূর্ণ নিবেদন। দুর্গাপূজা সনাতন ধর্মাবলম্বী হিন্দু জনগণের কাছে সবচেয়ে প্রিয় এবং বড় উৎসব। দুর্গাপূজা শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ের উৎসবই নয়, এটি আজ সর্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে।

হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় এ ধর্মীয় উৎসবকে ঘিরে এখন সারাদেশে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। দুর্গাপূজাকে আনন্দমুখর করে তুলতে দেশজুড়ে পূজা মণ্ডপগুলো বর্ণাঢ্য সাজে সাজানো হয়েছে। এবার সারাদেশে ৩২ হাজার ১১৮টি পূজামণ্ডপে দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ঢাকা মহানগরে পূজা হবে ২৩৮টি। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের প্রতিটি পূজামণ্ডপের নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশ, আনসার, র‌্যাব ও বিডিআর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। পুলিশ এবং র‌্যাবের পাশাপাশি প্রায় প্রতিটি মণ্ডপে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী দায়িত্ব পালন করবে।
ধর্মীয় উৎসবের দুটি দিক। একটি শাস্ত্রীয় আনুষ্ঠানিকতা, প্রার্থনা প্রভৃতি। আরেকটি সামাজিক দিক। শাস্ত্রীয় আনুষ্ঠানিকতা শুধু ধর্মাবলম্বী ভক্তদের জন্য। কিন্তু উৎসবের সামাজিক–সাংস্কৃতিক দিকটি খুব বড়। সেটা ধর্মবর্ণ–নির্বিশেষে সবার জন্য।

আমাদের সংবিধানে সকল ধর্ম ও বর্ণের মানুষের সমান অধিকার সুনিশ্চিত করা হয়েছে। সকলে মিলে যুদ্ধ করে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছি। তাই এই দেশ আমাদের সকলের। বাংলাদেশ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের নিরাপদ আবাসভূমি।

আমাদের এ দেশ অর্জিত হয়েছে হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সবার মিলিত রক্তস্রোতের বিনিময়ে। সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে অসাম্প্রদায়িক বাঙালিদের জন্য একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের দেশ রচিত হয়েছে। সব ধর্মের বাণী হচ্ছে – মানুষের কল্যাণ।

ধর্মের মূলবাণী বুকে ধারণ করে যদি আমরা অনুশীলন করি, তবে পৃথিবীতে আর কোনো অশান্তি বা হানাহানি থাকবে না। কিন্তু পৃথিবীতে আমরা ধর্মের অনেক অপব্যাখ্যা দেখি। অপব্যাখ্যা করে মানুষকে ভুল পথে পরিচালিত করার অপচেষ্টাও হয়। সে কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে এত দ্বন্দ্ব সংঘাত আর রক্তপাত। তবে কোনো ধর্মই হানাহানির কথা বলেনি। প্রতিটি ধর্মেই মানুষকে ভালোবাসার কথা বলা হয়েছে।

অশুভ শক্তির বিনাশ এবং সত্য ও সুন্দরের আরাধনা শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রধান বৈশিষ্ট্য। দুর্ভিক্ষ, মহামারি প্রভৃতি দুর্যোগ মানুষের পৃথিবীতে থাকবেই। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, দুর্গতি থেকে মানুষকে মুক্তি দিতেই দুর্গতিনাশিনীর মর্ত্যে আগমন। পঞ্জিকা মতে, এ বছর ঘোড়ায় চড়ে ধুলি উড়িয়ে আগমন হবে দেবীর, বিদায় নেবেন দোলায় চড়ে। মহালয়ার পাঁচদিন পর অর্থাৎ ১১ অক্টোবর বোধনের মধ্য দিয়ে মহাষষ্ঠী শুরু হয়েছে আর ১৫ অক্টোবর হবে দেবী বিসর্জন।

বাংলাদেশে বিরাজমান হাজার বছরের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্য আরো সমৃদ্ধ হবে। আরো সুসংহত হবে বাংলাদেশে অসাম্প্রদায়িক চেতনা -আজকের এই দিনে এমনটাই প্রত্যাশা। সম্প্রীতির বন্ধন অটুট থাকুক। সবাইকে শারদীয় শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা।

লেখক: যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, মাহবুব-উল-আলম হানিফ  বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।

সূত্র:বাংলাদেশপ্রতিদিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *